আমে ব্যাগিং প্রযুক্তি

 

আম গবেষণার মতে  আমচাষীগণ আম উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে ১৫-৬২ বার বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকেন। ফ্রট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার মাধ্যমে মাত্র ৩-৪টি স্প্রের মাধ্যমে রপ্তানিযাগ্য আম উৎপাদন সম্ভব।

বর্তমানে  প্রযুক্তিটি এদেশে ফল উৎপাদনে একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি হিসেবে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

ব্যাগিং প্রযুক্তি কি?  

ফুট ব্যাগিং প্রযুক্তি বলতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় একটি  বিশেষ ধরনের ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করাকে বুঝায়। ব্যাগিং করার পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানা থাকে ব্যাগটি।

ফুট ব্যাগিং এর উদ্দেশ্য্ :

 আমের আশানুরুপ ফলন পাবার আশায় বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ফলে বালাইনাশকের ব্যবহার করে থাকে এতে যে সব প্রভাব পড়ে :

১।জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি ফসলের উৎপা দনকে ব্যাহত করে

২। অতিরিক্ত স্প্রে করার ফলে উপকারী পোকার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে আমের কাঙ্ক্ষিত পরাগায়ণ বিঘ্নিত হয়।

 এই অবস্থা বিভিন্ন ফল উৎপাদনে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে :

১।বালাইনাশকের ব্যবহার অনেকাংশেই কমানো ম্ভব হবে।  

 ২। ব্যাগিং করা আম বেশি দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়।

৩। আমকে সংরক্ষণ করতে প্রয়োজন হয় না ফরমালিন নামক বিষাক্ত রাসায়নিকের।

৪। এছাড়াও আমকে বাইরের বিভিন্ন ধরনের আঘাত, পাখির আক্রমণ, প্রখর সূর্যালোক এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে সহজেই রক্ষা করা সম্ভব।

 আমের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে আমের ফলছিদ্রকারী ও মাছি পোকা। এই পোকা দুইটি আমের বর্ধনশীল পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং করা হয় তাহলে কোন স্ত্রে ছাড়াই পোকা দুইটির হাত থেকে আম ফলকে রক্ষা করা সম্ভব।

৫। ব্যাগিং প্রযুক্তিতে উৎপাদিত হবে বিষমুক্ত আম, কমবে আমের উৎপাদন খরচ, কমবে দূষণের মাত্রা এবং বাড়বে আমের গুণগত মান।




আমে ব্যাগিং করার উপযুক্ত সময় ও পদ্ধতি:

 প্রত্যেক জাতের আমের জন্য করার সময় এক নয়। যেমন বারি আম-১, , , , খিরসাপা জাতের আমে ব্যাগিং করা হয় ৪০-৫৫ দিন বয়সের গুটিতে।

 আমের অন্যান্য জাতগুলি যেমন বারি আম-৩, , , ফজলি ও আশ্বিনা জাতে ব্যাগিং করা হয় গুটির বয়স ৬০-৬৫ দিন হলে। এই সময়ে আম জাতভেদে মার্বেল আকারের বা এর চেয়েও বড় আকারের হয়ে থাকে। আমের প্রাকৃতিক ঝরা বন্ধ হলে এবং ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ শুরু হওয়ার পূর্বেই ব্যাগিং করতে হয়। ব্যাগিং করার পূর্বে অবশ্যই কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফল ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা ঠিক নয়। আমের ক্ষেত্রে সাধারণত তিনটি স্প্রে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।  প্রথমবার আম গাছে মুকুল আসার আনুমানিক ১৫-২০ দিন পূর্বে,

দ্বিতীয়বার মুকুল আসার পর অর্থাৎ আমের মুকুল যখন ১০-১৫ সেমি লম্বা হলে ,

এবং ৩য় বার আম যখন মটর দানারমতো হলে

 এর পরপরই আমে স্প্রে করে ব্যাগিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আমে ফুট ব্যাগ ব্যবহারের নিয়মকানুন:

 ১.  ফল পাতলা করণ :

একটি পুষ্পমঞ্জুরীতে অনেকগুলো আম থাকলে প্রথমেই ফল পাতলা করতে হবে। এরপর সবচেয়ে ভালো, দাগমুক্ত একটি অথবা দুটি আমে ব্যাগিং করতে হবে। তবে বড় জাতের আমের ক্ষেত্রে প্রতি পুষ্মমঙুরীতে একটির বেশি ফল রাখা উচিৎ নয়।

২।   মরা ও শুকনা আম, উপপত্র, মুকুলের অংশবিশেষ লেগে থাকলে বা ব্যাগিং করতে অসুবিধার সৃষ্টি করলে তা পরিষ্কার করতে হবে।।

. সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যাগ সংগ্রহ করা এবং প্রয়োজনীয় শ্রমিকের ব্যবস্থা করা । চেয়ার বা টুল বা মই সঙ্গে থাকলে ভাল হয়।

 ব্যাগিং করার পূর্বে  একটি কীটনাশক ও একটি ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

৫।এরপর আমগুলো শুকালে ব্যাগিং করতে হবে।

  রৌদ্রোজুল আম ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা  উচিৎ নয়।

৭।  ব্যাগের উপরের অংশ দুই পাশ হতে ভাঁজ করতে করতে মাঝ বরাবর আসতে হবে।

  এরপর সংযুক্ত তার দ্বারা ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে। যেন কোন অবস্থাতেই পানি, পিপড়া, মিলিবাগ প্রবেশ করতে

না পারে।

৯।. রঙিন আমের জন্য একস্তর যুক্ত সাদা ব্যাগ  এবং

১০। অন্য যে কোন জাতের জন্য বাদামী ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।

 বিশেষভাবে উলেখ্য যে, দুই স্তর যুক্ত বাদামী রঙের ব্যাগ যে কোন আমকে রঙিন করতে পারে অর্থাৎ হলুদ করতে পারে। আর এই রঙ পরিবর্তনে সময়। লাগে ৩৫-৪৫ দিন।

ব্যাগিং প্রযুক্তির প্রধান সুবিধা:

নিরাপদ, বিষমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের সহজ উপায়।

বালাইনাশকের ব্যবহার কমবে

৩। পোকামাকড়ের  আক্রমন কম হবে

৪ ।আমকে রঙিন করা যায়

৫।আমের সংরক্ষণকাল বাড়ানো যায়

৬। রপ্তানির জন্য খুবই গুরুতুপর্ণ

 

Post a Comment

0 Comments