বীজ পরীক্ষাকরণ (SeedTesting)
অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা, সতেজতা, কীটপতঙ্গের উপস্থিতি এবং ক্ষত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে নিতে মানসম্পন্ন বীজ পেতে হলে প্রথমে বপন করা হবে এমন বীজের গুণাগুণ বৈশিষ্ট্য, যেমন- বিশুদ্ধতা, সজীবতা ,অঙ্কুরোদগম,সতেজতা পরীক্ষার মাধ্যমে মুল্যায়ন করে নিতে হবে ।
বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষা
উপযুক্ত পরিবেশে বীজের ভ্রুণ হতে অংকুর বের হয়ে সুস্থ-সবল চারা
গজানোকে বীজের অংকুরোদগম বলে আন্তর্জাতিক বীজ পরীক্ষণ সমিতির দেয়া সংজ্ঞা
অনুযায়ী অনুকুল পরিবেশে বীজের ভ্রুণ থেকে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় অংগ নির্গমন ও
বৃদ্ধি যা পরিণামে একটি স্বাভাবিক উদ্ভিদে পরিণত হবার ইঙ্গিত বহন করে এমন
সম্ভাবনার পরিস্থিতিকে বীজের অংকুরোগদম বলে । ব্যবহারের পূর্বে বীজ গজানোর পরীক্ষা
করা হলে বীজ ভালো আছে নারি। বীজ হিসেবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে তা সহজেই জানা
যায়। বীজ পরীক্ষা করে আগেভাগেই ফলাফল জান গেলে খারাপ বীজের লোকসান থেকেও বাঁচা
যায় । বীজের মুখ ফাটলেই বা অংকুর বের হলেই যে বীজ ভালো হাত এ ধারণাটি সঠিক নয় ।
কারণ অংকুর বের হওয়ার পরও খারাপ বীজের কারণে অনেক চারা মারা যেতে দেখা যায় সে
কারণে বীজ থেকে চারা গজানোর পর সম্পূর্ণ চারাটি পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো কোনো
বীজের নমুনার শতকরা হার হিসেবে কয়টি বীজ গজাতে সম তা নিরূপণ করা । অংকুরোদগম
ক্ষমতা সন্তোষজনক না হলে মাঠে বিশুদ্ধ বীজ বপন করেও আশানুরূপ ফলন পাখা যায় না।
তাই যে কোনো ফসলের বীজ বপনের পূর্বে অংকুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করে নেয়া একান্ত
প্রয়োজন পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত নমুনা থেকে বিশুদ্ধ বীজ নিয়ে অংকুরোদগম পাত্রে
বসাতে হয়। সাধারণত বড় আকারের বীজ ৫০টি এবং ছোট আকারের বীজ ১০০টি করে পরীক্ষার
জন্য বসানো হয় ।
অংকুরোদগম পরীক্ষার জন্য কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি হলো- র্যাগডল বা ছালা পেচানো পদ্ধতি, মাটির পাত্র পদ্ধতি, ব্লটিং পেপার পদ্ধতি, পেট্রিডিস পদ্ধতি, কলার খোল পদ্ধতি, মানকচুর ডগা পদ্ধতি ইত্যাদি।
০১. পেট্রিডিসে পরীক্ষা
পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত পাত্রের তলদেশে চোষ কাগজ বসিয়ে পরিমানমত বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে । এবার চোষ কাগজের উপর নির্দিষ্ট সংখ্যক বীজ ফাঁক ফাঁক করে বসিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে পাত্রটিকে আলো বাতাসময় ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। একটি ছোট কাগজে বীজের নাম, বীজের সংখ্যা, পরীক্ষা বসানোর তারিখ লিখে
পেট্রিডিসে আঠা দিয়ে লাগাতে হবে।
চোষ কাগজ শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে পরিমানমত পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে
হবে। সাধারণত বীজ বসানোর ৩ দিন থেকে অংকুর গণনার কাজ শুরু হয় এবং ৭ দিনের মধ্যেই
শেষ হয়ে যায় । এভাবে প্রতিদিন অংকুরিত বীজ গণনার পর সেগুলো ফেলে দেয়া হয়। একটি
চিমটার সাহায্য নিলে গণনার কাজে সুবিধা হয় । প্রতিদিন যে কয়টি অংকুরিত বীজ
পাওয়া যাবে তা একটি ছকে লিখে রাখতে হবে । উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক
নমুনা থেকে দু'দফায় বীজ পরীক্ষা করা হলে ফলাফল ভুল হওয়ার আশংকা কম থাকে ।
০২. মাটির পাত্র পদ্ধতি
ভেজা বালি ভর্তি মাটির থালায় বা প্লাসটিক পাত্রে ১০০ টি বীজ
বসিয়ে হালকা করে বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজ বসানোর পর পাত্রটি ছায়াতে রাখতে
হবে। বালি যেন শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বালিতে গজানোর কারণে
পরীক্ষার সময় চারা উঠালে শিকড় ছিঁড়ে যাবে না-ফলে শিকড়সহ সম্পূর্ণ চারাটি
পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। মৌসুম ভেদে বপনের ৭ থেকে ১০ দিন পর গজানো চারা বালি থেকে
তুলে একটা একটা করে পরীক্ষা করে অপেক্ষাকৃত ছোট-বড় ও রোগাক্রান্ত চারা, দুর্বল
শিকড়সহ চারা, মৃত-পচা বীজ, অগজানো শক্ত বীজ ইত্যাদি বাদ দিয়ে
যদি কমপক্ষে ৮০টি চারা সুস্থ-সবল পাওয়া যায় তা হলে বুঝতে হবে বীজ ভালো আছে।
০৩. ব্লটিং পেপার পদ্ধতি
ব্লটিং পেপার এক ধরনের মোটা চোষ কাগজ, যার উপর ৫০-১০০ টি বীজ রেখে এবং হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, পানি যেন শুকিয়ে না যায়। পানি শুকিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে হালকা পানি দিতে হবে।
০৪. কলার খোল পদ্ধতি
চাকু দিয়ে কলার খোল লম্বালম্বি কেটে তার মধ্যে ৫০-১০০ টি বীজ
স্থাপন করে ভালোভাবে সুতলী দিয়ে বেঁধে ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, পানি যেন
শুকিয়ে না যায়। পানি শুকিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে হালকা পানি দিতে হবে।
০৫. র্যাগডল বা পাটের চট পেচানো পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় এক ধরনের মোটা চট। যার উপর ৫০-১০০ টি
বীজ রেখে বাঁশের কাঠি দিয়ে পেচিয়ে এবং হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে ঠাণ্ডা ও
ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। চটের পরিবর্তে পুরানো
কাপড়/ডাস্টার ব্যবহার করেও এ পরীক্ষা করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, পানি যেন
শুকিয়ে না যায় । পানি শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে হালকা পানি দিতে হবে।
০৬. মান কচুর ডগা
চাকু দিয়ে মান কচুর ডগা লম্বালম্বি কেটে তার মধ্যে ৫০-১০০ টি বীজ
স্থাপন করে ভালোভাবে সুতলী দিয়ে বেধে ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, পানি যেন
শুকিয়ে না যায়। পানি শুকিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে হালকা পানি দিতে হবে।
বীজ পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত একটি ছকের নমূনা
বীজ অংকুরোদগমে বসানোর তারিখ-
বীজের সংখ্যা---
যে অংকুরিত বীজে ভবিষ্যৎ মূল ও কাণ্ড স্পষ্টভাবে চারা গজাতে দেখা
যায় সে বীজকেই বীজ হিসেবে
অন্যথায় তাকে অস্বাভাবিক চারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বীজের অংকুরোদগমকে শতকরা হারে (%) প্রকাশ করা হয় -
% অংকুরোদগম =
অংকুরিত মোট বীজের সংখ্যা x ১০০/মোট বীজের সংখ্যা
0 Comments